ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সিস্টেম চালু হয় ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি। তখন থেকেই ই-পাসপোর্ট করার প্রতি মানুষের ঝোঁক। স্বাভাবিক ভাবেই ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকেরই।


পাসপোর্টের ধরণের পেক্ষিতে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ৫ কিংবা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে সেই বিষয়ে ইন-ডিটেইলস আলোচনা রয়েছে পুরো আর্টিকেল জুড়ে।

পাসপোর্ট এর ধরন

বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টের ধরন - সবুজ, নীল, লাল

ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ভর করে পাসপোর্টের ধরণের উপর। বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধরনের পাসপোর্ট চালু রয়েছে: সবুজ, নীল এবং লাল।

প্রতিটি পাসপোর্টের রঙ এবং ধরণ নির্দিষ্ট নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারণের মাপকাঠি মূলত তাদের পেশা ও ভ্রমণ সুবিধার ওপর ভিত্তি করে করা হয়। নিচে বাংলাদেশের পাসপোর্টের ধরণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:

সবুজ পাসপোর্ট

বাংলাদেশে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সবুজ পাসপোর্ট বা অর্ডিনারি পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। বৈবাহিক অথবা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকরা এই পাসপোর্ট পান এবং এটি ব্যবহার করে তারা বিদেশে ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন।

সরকারি কর্মচারীরাও এই সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন, তবে তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কাজে বিদেশে ভ্রমণ করার জন্য, সরকারি কাজে নয়।

নীল পাসপোর্ট

নীল পাসপোর্ট বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট মূলত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য যারা সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ করেন। এটি পেতে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস থেকে অনুমোদন বা গভর্নমেন্ট অর্ডার (GO) প্রয়োজন হয়। এই পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা অন্তত ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন।

২০১০ সালের আগে নীল পাসপোর্ট চালু ছিল না, এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমোদন সবুজ পাসপোর্টে হাতে লিখে দেয়া হতো।

লাল পাসপোর্ট

লাল পাসপোর্ট বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট কূটনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত। রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সচিব এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রী এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা এটি ব্যবহার করেন।

লাল পাসপোর্টধারীরা বিদেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবতরণের পর অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পান।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

পুরাতন পাসপোর্ট থেকে নতুন পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হিসেবে বিশেষ করে পুরাতন পাসপোর্ট দেখাতে হয়, অন্যথায় নতুন পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ধারিত নির্দেশনা অনুযায়ী সাবমিট করতে হয়।

এই পর্যায়ে কোন শ্রেণীর মানুষের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে বিষয়ে জানানো হলো। 

শিশুদের পাসপোর্ট এর আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

১) অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদপত্রের কপি: শিশুর জন্ম সনদটি (ইংরেজি ভার্সন) অবশ্যই অনলাইনে নিবন্ধিত হতে হবে। অনলাইনে নিবন্ধিত জন্ম সনদপত্র না হলে তা পাসপোর্টের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।

২) মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: শিশুর পাসপোর্টের জন্য বাবা এবং মা–উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দিতে হবে। সন্তানের জন্ম সনদে উল্লিখিত বাবা-মায়ের নামের বানান জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলতে হবে।

৩) থ্রি-আর সাইজ ছবি (শুধুমাত্র ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য): ছয় বছরের নিচের শিশুদের জন্য ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি থ্রি-আর সাইজের ছবি জমা দিতে হবে। ৬ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ছবি প্রয়োজন নেই কারণ তাদের ছবি সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে তোলা হবে।

৪) পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান: ই-চালান ওয়েবসাইট থেকে চালান ডাউনলোড করতে হবে। এরপর নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে জমা দেয়া যেতে পারে। ব্যাংকে জমা দেয়ার পর গ্রাহক রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে। 

৫) আবেদনপত্রের অনলাইন কপি: ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে পূরণ করার পর আবেদনপত্রের কপি প্রিন্ট করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। 

প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

সাধারণত ১৮ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তি, যার ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে তাকেই প্রাপ্তবয়স্ক বলা হয়। এই জাতীয় ব্যক্তির ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো হলো: 

১) জাতীয় পরিচয় পত্রের (NID) কপি: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড অবশ্যই প্রয়োজন। এটি হলো পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার প্রধান ডকুমেন্ট।

২) নাগরিক সনদপত্র (ঐচ্ছিক): ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক ইস্যুকৃত নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন, যা প্রমাণ করে যে আবেদনকারী ঐ এলাকার বাসিন্দা। 

৩) ইউটিলিটি বিলের কপি: বাসস্থানের প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, বা টেলিফোন বিলের কপি জমা দিতে হবে। 

৪) অনলাইন আবেদনের কপি: ই-পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হলে ৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আবেদন কপি ডাউনলোড করে জমা দিতে হবে।

৫) আবেদন ফি পরিশোধের চালান (Bank Draft): আবেদন ফি পরিশোধের পর ব্যাংক থেকে পাওয়া চালানের কপি জমা দিতে হবে। ই-চালান সিস্টেম থেকে ফি পরিশোধ করা যায়। পরবর্তীতে এটি নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে জমা দিতে হয়। 

৬) একাডেমিক সার্টিফিকেট (শিক্ষার্থী হলে): যদি আবেদনকারী শিক্ষার্থী হোন, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইস্যুকৃত স্টুডেন্ট কার্ডের কপি বা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

৭) বিবাহিত হলে কাবিননামা (বিবাহিত ব্যক্তির জন্য): বৈবাহিক অবস্থার প্রমাণ হিসেবে বিবাহিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে কাবিননামার কপি জমা দিতে হবে।

৮) পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (ঐচ্ছিক): প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেয়া ঐচ্ছিক ব্যাপার। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় না।

সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সাধারণ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মতো হলেও, অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।

এই অতিরিক্ত ডকুমেন্টগুলো হলো NOC (No Objection Certificate) এবং GO (Government Order)। সব মিলিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হলো: 

  • NID কার্ডের কপি
  • ইউনিয়ন বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক ইস্যুকৃত নাগরিক সনদপত্র।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোনের বিল)। 
  • ৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আবেদনের অনলাইন কপি
  • বিবাহিত হলে কাবিননামা জমা দিতে হবে। 
  • পিতা মাতার NID কার্ডের কপি (ঐচ্ছিক)

তাছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য বিশেষ ভাবে প্রয়োজন – 

NOC (No Objection Certificate): যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে বিদেশ যেতে চান, তবে তার মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা বিভাগের থেকে NOC সংগ্রহ করতে হবে। এটি পাসপোর্ট আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

GO (Government Order): সরকারি বা রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে যেতে চাইলে আবেদনকারীকে তার মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে Government Order (GO) সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

আশা করি উপরোক্ত তথ্যের আলোকে মোট ৩ ধরণের পাসপোর্টের গুলোর ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সেই বিষয়ে জানতে পেরেছেন। পাসপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেকোনো দেশে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে।

পাসপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের আলোকে তথ্য প্রদান করবেন। তাছাড়া পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় জানতে অনুসরণ করুন আমাদের ওয়েবসাইটটি, ধন্যবাদ।

Scroll to Top